হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি, ঔষধ নির্বাচন,প্রয়োগ ও মাত্রা।

হোমিওপ্যাথি একটি লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা বিজ্ঞান। মনে রাখতে হবে যে, রোগের লক্ষণগুলোই হলো রোগের প্রকৃত পরিচয় পাওয়ার একমাত্র রাস্তা। তাই রোগের শারীরিক লক্ষণসমূহ, মানসিক লক্ষণসমূহ এবং রোগীর ব্যক্তিগত লক্ষণসমূহ বুঝতে না পারলে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলি সংগ্রহ করতে না পারলে, সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে হাজার বার ঔষধ পাল্টিয়ে এবং হাজার ডোজ ঔষধ খেয়েও সামান্য ছোটখাট রোগও সারানো যায় না। আবার মারাত্মক অসুখ-বিসুখ কিংবা অনেক বছরেরও পুরনো রোগ-ব্যাধিও মাত্র এক ডোজ ঔষধে নির্মূল হয়ে যায় যদি লক্ষণের সাথে পুরোপুরি মিলিয়ে ঔষধ দেওয়া যায়। রোগের নাম নয়, বরং রোগ এবং রোগীর সমস্ত লক্ষণসমূহের উপর ভিত্তি করে ঔষধ নির্বাচন করতে হবে। কারণ হোমিওপ্যাথিতে রোগের নামে কোন ঔষধ নাই। একই রোগের জন্য সব রোগীকে একই ঔষধ দিলে কোন কাজ হবে না। যেমন ধরুন ডায়েরিয়ার কথা, ডায়েরিয়ার সাথে যদি পেটে ব্যথা থাকে তবে এক ঔষধ আর যদি পেটে ব্যথা না থাকে তবে অন্য ঔষধ। ডায়েরিয়ার ফলে যদি রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে তবে এক ঔষধ আর যদি দুর্বল না হয় তবে অন্য ঔষধ। ডায়েরিয়া শুরু হওয়ার কারণের ওপর ভিত্তি করেও ঔষধ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে এবং ব্যথা বা পায়খানার রঙ, গন্ধ, ধরণ বা পরিমাণের ওপর ভিত্তি করেও ঔষধ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আপনার রোগের লক্ষণসমূহ যে-ঔষধের মধ্যে সবচেয়ে বেশী পাওয়া যাবে, সেটি হবে আপনার উপযুক্ত ঔষধ। মনে করুন আপনার জ্বর হয়েছে ; যদি দেখেন যে আপনার জ্বরের দুইটি লক্ষণ ব্রায়োনিয়া ঔষধটির সাথে মিলে যায় অন্যদিকে তিনটি লক্ষণ বেলেডোনা ঔষটির সাথে মিলে যায়, তাহলে বেলেডোনাই হবে আপনার উপযুক্ত ঔষধ। আবার শারীরিক লক্ষণের চাইতে মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব বেশী। কাজেই যদি দেখেন যে, আপনার শারীরিক লক্ষণসমূহ রাস টক্স ঔষধটির সাথে মিলে যায় কিন্তু মানসিক লক্ষণ একোনাইট ঔষধটির সাথে মিলে যায়, তাহলে একোনাইট ঔষধটি-ই আপনার খাওয়া উচিত। হোমিওপ্যাথিতে একবারে একটির বেশী ঔষধ খাওয়া নিষিদ্ধ। মনে করুন, আপনার আমাশয় হয়েছে। তো আমাশয় হলে সাথে পেট ব্যথাও থাকে এবং কয়েকবার পায়খানা করলে শরীরে দুর্বলতাও এসে যায়। এক্ষেত্রে এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা আপনাকে তিনটি ঔষধ দিবে; একটি আমাশয়ের জন্য, একটি পেটব্যথার জন্য এবং স্যালাইন দিবে দুর্বলতার জন্য। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে যদি ঠিকমতো লক্ষণ মিলিয়ে দিতে পারেন তবে একটি ঔষধেই আপনার আমাশয়, পেট ব্যথা এবং দুর্বলতা সেরে যাবে। এজন্য তিনটি ঔষধ লাগবে না। ভাষাজ্ঞানের অভাবে অবুঝ শিশুরা এবং পশুপাখিরা তাদের অনেক কষ্টদায়ক রোগ লক্ষণের কথা বলতে পারে না। রোগের যন্ত্রণায় বেঁহুশ ব্যক্তিও তাদের কষ্টের কথা বলতে পারে না। এইসব ক্ষেত্রে আমাদেরকে বুদ্ধি খাটিয়ে রোগীর লক্ষণসমূহ আন্দাজ করে নিতে হবে। প্রতিটি রোগের সাথে যতগুলো ঔষধের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তার সবগুলো প্রথমে পড়ে নিন এবং তারপর যে ঔষধটি আপনার রোগ লক্ষণের সাথে সবচেয়ে বেশী মিলে যায়, সেটি খাওয়া শুরু করুন। ঔষধ কেনার নিয়ম-কানুন ? জার্মানী, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যাণ্ড, পাকিস্তান, ভারত প্রভৃতি দেশে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ তৈরী হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও প্রায় আটাত্তরটির মতো হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানী আছে। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ কেনার সময় দোকানদারকে বলবেন জার্মানীর অথবা আমেরিকান ঔষধ দেওয়ার জন্য। কেননা জার্মানীর এবং আমেরিকান ঔষধের কোয়ালিটির ওপর সবারই আস্থা আছে। হোমিওপ্যাথিক মূল ঔষধটি তৈরী করা হয় তরল আকারে। কিন্তু সেগুলো রোগীদের দেওয়া হয়ে থাকে পানিতে মিশিয়ে, (চিনির) বড়িতে মিশিয়ে, দুধের পাউডারে মিশিয়ে কিংবা অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি মূল ঔষধটিও দেওয়া হয়। তবে সরাসরি মূল ঔষধটি কেনা বা খাওয়া উচিত নয়। কেননা এতে ঔষধ বেশী খাওয়া হয়ে যায়; ফলে তার সাইড-ইফেক্টও বেশী হতে পারে। তাছাড়া শিশির কর্ক টাইট করে লাগাতে ভুলে গেলে ঔষধ উড়ে যায় এবং মুখ খুলে বা শিশি ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে গেলে সেগুলো আর উঠানো যায় না। কাজেই ঔষধ চিনির বড়িতে কেনা এবং খাওয়াই বুদ্ধিমানের পরিচায়ক। এক ড্রাম, দুই ড্রাম, হাফ আউন্স, এক আউন্স ইত্যাদি পরিমাণে ঔষধ ক্রয় করবেন। ঔষধ কেনার সময় এই ভাবে বলতে হবে যে, ডাক্তার সাহেব ! আমাকে অমুক ঔষধটি অমুক শক্তিতে (যেমন Nux vomica 30) বড়িতে এক ড্রাম দেন। (কারণ হোমিওপ্যাথিক ঔষধের যারা ব্যবসা করেন তারা সবাই গভার্নমেন্ট রেজিষ্টার্ড হোমিওপ্যাথিক ডাক্তাররা।) হোমিও ঔষধের মেয়াদ থাকে কত দিন ? মূল হোমিও ঔষধ যা তরল আকারে তৈরী করা হয়ে থাকে, তার কোন এক্সপাইরি ডেট নাই অর্থাৎ এগুলো কখনও নষ্ট হয় না। কেননা মূল হোমিও ঔষধটি ইথাইল এলকোহল বা রেকটিফাইড স্পিরিটে তৈরী করা হয়ে থাকে। আর এলকোহল বা স্পিরিট যেহেতু কখনও নষ্ট হয় না, সেহেতু মূল হোমিও ঔষধও কখনো নষ্ট হয় না। এগুলো আপনি কেয়ামত পযর্ন্ত নিশ্চিনে- ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু মূল ঔষধটি যখন আপনি চিনির বড়িতে, পাউডারে বা পানিতে মিশিয়ে কিনে আনবেন, সেটি আপনি অনন্তকাল ব্যবহার করতে পারবেন না। কেননা সেগুলো কয়েক বছর পরেই নষ্ট হয়ে যায়। যেমন আপনি একটি ঔষধ চিনির বড়িতে কিনে আনলেন এবং পাঁচ বছর পরে দেখলেন সাদা চিনির বড়িগুলি হলুদ বা লাল বা কালো হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে ঔষধগুলি ফেলে দেওয়া উচিত; কেননা এগুলো যে নষ্ট হয়ে গেছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কত শক্তির ঔষধ খাওয়া উচিত ? হোমিওপ্যাথিক ঔষধের শক্তিগুলো হলো ৩, ৬, ১২, ৩০, ২০০, ১০০০ (বা 1M), ১০০০০ (বা 10M), ৫০০০০ (বা 50M), ১০০,০০০ (বা CM) ইত্যাদি। সবচেয়ে নিম্নশক্তি হলো মাদার টিংচার বা কিউ (Q) এবং ইহার শক্তিকে ধরা হয় শূণ্য (zero)। তাদের মধ্যে ৩, ৬, ১২, ৩০ কে বলা হয় নিম্নশক্তি আর ২০০ শক্তিকে বলা হয় মধ্য শক্তি। পক্ষান্তরে ১০০০, ১০০০০, ৫০০০০ এবং ১০০০০০ কে ধরা হয় উচ্চ শক্তি হিসাবে। নতুন রোগ বা ইমারজেন্সী রোগের ক্ষেত্রে নিম্নশক্তি এবং মধ্যশক্তির ঔষধ সবচেয়ে ভালো কাজ করে। পক্ষান্তরে উচ্চ শক্তির ঔষধ প্রয়োগ করতে হয় অনেক দিনের পুরনো রোগে অর্থাৎ ক্রনিক ডিজিজে। হোমিওপ্যাথির আবিষ্কারক ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের মতে, ৩০ শক্তি হলো স্ট্যান্ডার্ড শক্তি। হ্যাঁ, ঔষধের প্রধান প্রধান লক্ষণসমূহের অনেকগুলো যদি রোগীর মধ্যে নিশ্চিত পাওয়া যায়, তবে এক হাজার (1M) বা দশ হাজার (10M) শক্তির ঔষধও খেতে পারেন। কিন্তু উচ্চ শক্তির ঔষধ অপ্রয়োজনে ঘনঘন খেলে মারাত্মক বিপদ হতে পারে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া উচ্চ শক্তির ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। কেননা সেক্ষেত্রে ঔষধের নির্বাচন ভুল হলে বিরাট ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। একই শক্তির ঔষধ সাধারণ একবারের বেশী খাওয়া উচিত নয়। অনেক সময় দ্বিতীয়বার এবং তৃতীয়বার খেলেও উপকার হয়। কিন্তু ইহার পর আর ঐ শক্তির ঔষধে তেমন কোন উপকার হয় না। হ্যানিম্যানের নির্দেশ হলো, প্রতিবার ঔষধের শক্তি বৃদ্ধি করে খেতে হবে। আপনার কাছে যদি একাধিক শক্তির ঔষধ না থাকে, তবে একমাত্রা (এক ফোটা বা ৪/৫ টি বড়ি) ঔষধকে আধা বোতল পানিতে মিশিয়ে প্রতিবার খাওয়ার পূর্বে জোরে দশবার ঝাঁকি দিয়ে ঔষধের শক্তি বাড়িয়ে খান। (সাধারণত হাফ লিটার বা তার চাইতেও ছোট বোতল ব্যবহার করা উচিত। সাধারণত একই বোতলে একবারের বেশী ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে অন্য কোন বোতল না থাকলে সেটিকে অবশ্যই সাবান দিয়ে এবং গরম পানি দিয়ে ভালো করে অনেকবার ধুয়ে নেওয়া উচিত।) ঔষধ কি পরিমাণ খেতে হবে ? পূর্ণ বয়ষ্কদের ক্ষেত্রে ঔষধ বড়িতে খেলে সর্বোচ্চ ৪/৫ (চার/পাঁচ) টি বড়ি করে খাবেন এবং তরল আকারে মূল ঔষধটি খেলে এক ফোটা করে খাওয়াই যথেষ্ট। তের বছর বয়স পযর্ন্ত শিশুদের ক্ষেত্রে ঔষধ বড়িতে খেলে ২/৩ (দুই/তিন) টি বড়ি করে খাবেন এবং তরল আকারে মূল ঔষধটি খেলে আধা ফোটা করে খাবেন। পক্ষান্তরে দুয়েক দিন বা দুয়েক মাসের একেবারে ছোট নবজাতক শিশুকে ঔষধ বড়িতে খাওয়ালে ১/২ (এক/দুইটি) টি বড়ি করে খাওয়াবেন এবং তরল আকারে মূল ঔষধটি খাওয়ালে এক ফোটার চার ভাগের এক ভাগ খাওয়ানোই যথেষ্ট। (এক ফোটা ঔষধকে এক চামচ পানির সাথে ভালো করে মিশিয়ে তার অর্ধেকটি ফেলে দিয়ে বাকী অর্ধেকটি খেলেই আধা ফোটা ঔষধ খাওয়া হবে। তেমনিভাবে এক ফোটা ঔষধকে এক চামচ পানির সাথে ভালো করে মিশিয়ে তার চার ভাগের তিন ভাগ ফেলে দিয়ে বাকীটুকু খেলেই এক ফোটার চার ভাগের এক ভাগ ঔষধ খাওয়া হবে।) কখনও ভাববেন না যে, এতো কম করে ঔষধ খাওয়ালে রোগ সারবে কিনা ? মনে রাখবেন ঔষধ বেশী খাওয়ালে বরং রোগ বেড়ে যেতে পারে। এজন্য বিশেষত শিশুরা মারাত্মকভাবে অসুস্থ হলে তাদেরকে নির্ধারিত পরিমাণের চাইতে বেশী ঔষধ খাওয়াবেন না, তাহলে তাদের রোগ বেড়ে গিয়ে জীবন নিয়ে টানাটানি শুরু হতে পারে। ঔষধ কিভাবে খেতে হবে ? ঔষধ খেতে হবে প্রধানত মুখ দিয়ে। যত ইমারজেন্সী সমস্যাই হোক না কেন, মুখে খেলেই চলবে। ঔষধের নির্বাচন যদি সঠিক হয়, তবে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে সেটি মুখে খেলেও একেবারে হাই পাওয়ারের ইনজেকশানের চাইতেও অন্তত একশগুণ দ্রুত কাজ করবে। ইনজেকশান দেওয়া, পায়খানার রাস্তা দিয়ে ঔষধ ঢুকানো বা এই জাতীয় কোন শয়তানী সিষ্টেমের হোমিওপ্যাথিতে স্থান নেই। যদি রোগীর দাঁত কপাটি লেগে থাকে বা বমির জন্য ঔষধ গিলতে না পারে, তবে ঔষধ মুখে বা ঠোটের ফাঁকে রেখে দিলেই চলবে। আবার ঔষধকে একটি বোতলে নিয়ে একটু পানির সাথে মিশিয়ে জোরে কয়েকটা ঝাঁকি দিয়ে তার বাষ্প নিঃশ্বাসের সাথে টেনে নিলেও কাজ হবে। আরেকটি পন্তুা আছে, তাহলো ঔষধকে একটু পানিতে মিশিয়ে পরিষ্কার চামড়ার ওপর মালিশ করা (যেখানে কোন চর্মরোগ নেই)। যে-সব শিশু বুকের দুধ খায়, তাদের যে-কোন রোগ-ব্যাধিতে তাদেরকে ঔষধ না খাইয়ে বরং তাদের মা-কে খাওয়ালেও কাজ হবে। শিশুরা বা মানসিক রোগীরা যদি ঔষধ খেতে অস্বীকার করে, তবে তাদেরকে না জানিয়ে দুধ, পানি, ভাত, চিড়া, মুড়ি, বিস্কিট, ইত্যাদির সাথে মিশিয়ে ঔষধ খাওয়াতে পারেন। তাতেও কাজ হবে। অধিকাংশ নতুন রোগ (acute disease) একমাত্রা হোমিও ঔষধেই সেরে যায়; যদি ঔষধের লক্ষণ আর রোগের লক্ষণ একশ ভাগ মিলিয়ে সঠিক শক্তিতে ঔষধ দেওয়া যায়।

⭕🌿🌳🍀🌲⭕🌿🌳🍀⭕🌿🌳🍀⭕

হোমিওপ্যাথিক টিপস অল্প সময়ে অধিক গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করায় ফেসবুক কতৃপক্ষ সম্ভবত অনেক পোস্ট স্পামবক্সে ফেলে দিয়ে বুস্ট করার জন্য বার বার রিমান্ডার দিচ্ছে।

এটি একটি পরামর্শ ও সচেতনতামূলক পেজ।বুস্ট করে জনপ্রিয়তা অর্জনের কোন কার্যক্রম গ্রহন করার মানষিকতা এডমিনের নেই।আর তাছাড়া দর্শক প্রিয়তার চেয়ে বড় বুস্ট আর নেই।

তাই বেশি বেশি লাইক ও শেয়ার করুন যাতে পরবর্তী লেখার অনুপ্রেরনা পাই আর আপনার মাধ্যমে যেন অন্য কেউ উপকার পায়।অন্যথায় হয়তো লেখার মানষিকতা হারিয়ে যাবে।যে কোন পরামর্শের জন্য যে কেউ যোগাযোগ করতে পারেন।সবার জন্য শুভকামনা রইল।

  

📗হোমিওপ্যাথিক টিপস

🌿germanhomoeocare.blogspot.com

☎হেল্পলাইন 🏪01955507911

No comments:

Post a Comment